রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

গোপন দানের উপকারিতা

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ:
দানকে ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল সাব্যস্ত করেছে। এর অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে কোরআন-হাদিসে। ইসলামের শিক্ষা হলো, দান করব এমন চুপি চুপি, যাতে কোনো ধরনের আত্মপ্রচার না থাকে। ডান হাত দান করবে তো বামহাতও যেন টের না পায়। হাদিসে এসেছে, ‘সাত ধরনের ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা তার ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এর অন্যতম হলো, ‘যে এমনভাবে দান করে, ডানহাতে দান করলে বামহাত টের পায় না।’ -সহিহ বোখারি : ১৪২৩

তবে হ্যাঁ, কখনো গোপনে দান করার চেয়ে প্রকাশ্যে দানের মধ্যে নিহিত থাকে অনেক কল্যাণ। যেমন দানের মাধ্যমে অন্যদের উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করা। এটাও যে দানের একটা গুরুত্বপূর্ণ খাত, সেদিকে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ইত্যাদি। প্রকাশ্যে দান করা মানেই মন্দ নয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা দান-সদকা যদি প্রকাশ্যে দাও, সেও ভালো আর যদি তা গোপনে গরিবদের দান করো তবে তা তোমাদের পক্ষে কতই না শ্রেয়!’ -সুরা বাকারা : ২৭১

দানের ক্ষেত্রে খুব করে খেয়াল রাখা, দান যেন প্রকৃত হকদার পায়। কারণ কিছু মানুষ থাকে, যারা অর্থ সংকটের শিকার, কিন্তু ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য ও সামাজিক অবস্থানের কারণে চক্ষুলজ্জায় কারও কাছে চায় না। মুখ খুলেও কিছু বলতে পারে না বা বলে না। দান করার সময় খুঁজে খুঁজে এমন লোকদের প্রাধান্য দেওয়া। কোরআন মাজিদে কত চমৎকারভাবে তাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, ‘তারা যেহেতু অতি সংযমী হওয়ার কারণে কারও কাছে সওয়াল করে না, তাই অনবগত লোকে তাদের বিত্তবান মনে করে। তোমরা তাদের চেহারার আলামত দ্বারা তাদের (তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা) চিনতে পারবে।’ -সুরা বাকারা : ২৭৩

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এক-দুই লোকমা খাবার বা এক-দুইটি খেজুরের জন্য যে মানুষের দ্বারে দ্বারে ধরনা দেয়- অভাবী তো সে নয়; প্রকৃত অভাবী হলো, যার অভাব আছে, কিন্তু তাকে দেখে তার অভাব আঁচ করা যায় না; যার ভিত্তিতে মানুষ তাকে দান করবে। আবার চক্ষুলজ্জায় সে মানুষের দুয়ারে হাতও পাততে পারে না।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৭৯

আরেকটি কথা, দান করা স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বপ্রণোদিত হয়ে। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয় সদকা আল্লাহর ক্রোধকে নিভিয়ে দেয় এবং অপমৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে।’ তাই বলে কি কেবল বিপদে যখন পড়ব তখনই দান-সদকা করব? না, ইসলামের শিক্ষা হলো, দান করো সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সবসময় সর্বাবস্থায়। কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল (সর্বাবস্থায় আল্লাহর জন্য অর্থ) ব্যয় করে…।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৩৪

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক লোক এসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, কখন দান করা উত্তম? তিনি ইরশাদ করলেন, ‘যখন তুমি (অতি প্রয়োজন বা লোভের কারণে) মাত্রাতিরিক্ত মিতব্যয়ী বা হাড়কিপটে হও এবং সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করো, অথবা যখন তুমি সুস্থাবস্থায় দীর্ঘায়ুর প্রত্যাশা করো তখন সদকা করা। এত দেরি করো না যে, মৃত্যু এসে যায় আর তখন তুমি (অসিয়ত করে) বলছো- আমার সম্পদগুলো অমুকের জন্য, অমুকের জন্য! অথচ (তুমি না বললেও) তা তাদের জন্য হয়েই আছে।’ – সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৭০৬

ইসলামের দৃষ্টিতে দান করতে হয় নিজের প্রয়োজনে। দানের মাধ্যমে গ্রহীতার প্রতি অনুগ্রহ করা হচ্ছে এমনটি নয় কখনো; বরং তার প্রাপ্য ও অধিকারটাই তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আর যাদের সম্পদে নির্ধারিত ‘হক’ (অধিকার) রয়েছে যাচ্ঞাকারী ও বঞ্চিতদের।’ -সুরা মাআরিজ : ২৪-২৫

অর্থাৎ কোরআন মাজিদে একে তাদের ‘হক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং দানকারীর মানসিকতা থাকবে, দান করছি নিজের প্রয়োজনে। গ্রহীতা ‘দান’টা গ্রহণ করে কেমন যেন আমার প্রতিই এক ধরনের করুণা করল!

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION